Logo

অর্থনীতি    >>   বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকে গেছে, উন্নয়নে প্রয়োজন সংস্কার

বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকে গেছে, উন্নয়নে প্রয়োজন সংস্কার

বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকে গেছে, উন্নয়নে প্রয়োজন সংস্কার

বাংলাদেশের শ্বেতপত্র কমিটির সদস্যরা ২ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান সরকারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং উন্নয়ন কার্যক্রমের বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, হাসিনা সরকার তার রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণের জন্য তথ্য উপাত্তকে নিজস্ব সুবিধায় ব্যবহৃত করেছে এবং একটি উন্নয়ন আখ্যান তৈরি করেছে। যেখানে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিদেশি ঋণের বোঝা চাপানো হয়েছে, যা পরবর্তী কয়েক প্রজন্মকে পরিশোধ করতে হবে। তাদের মতে, বাংলাদেশ বর্তমানে মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকে গেছে, এবং এর থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং যথাযথ সংস্কার।

শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গত সরকারের আমলে তথ্য উপাত্তের ব্যবহার যথাযথ ছিল না, যার ফলে উন্নয়নের সঠিক চিত্র তুলে ধরা হয়নি। সরকার নিজেই এক ধরনের উন্নয়ন আখ্যান তৈরি করেছিল, যেখানে প্রকৃত তথ্যের অভাব ছিল। তিনি আরো বলেন, সরকারের তথ্যে এক বড় ঘাটতি রয়েছে, এবং যদি সরকারের এই তথ্য উপাত্তের দিকে নজর না দেওয়া হয়, তবে ভবিষ্যতে দেশীয় উন্নয়ন সম্ভব হবে না।

ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং আমলাদের মিলে একটি চোরচক্র তৈরি হয়েছে, যার মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে বিশাল অংকের দুর্নীতি হয়েছে। ২০১৮ সালের পর এই দুর্নীতির মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, সরকারি পদক্ষেপগুলো এখনো জনগণের কাছে স্বচ্ছভাবে তুলে ধরা হয়নি এবং এমন পদক্ষেপগুলোকে জনসমক্ষে নিয়ে আসা প্রয়োজন।

ড. জাহিদ হোসেন, শ্বেতপত্র কমিটির সদস্য, বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকে গেছে এবং এখান থেকে উত্তরণের জন্য পদ্ধতিগত সংস্কারের প্রয়োজন। তিনি মনে করেন, সরকারের আর্থিক ব্যবস্থায় বৃহত্তর হস্তক্ষেপের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।

গবেষক এবং অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, মেগা প্রকল্পগুলির মাধ্যমে দুর্নীতি দেশে বিশাল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে। তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে দুর্নীতির ফলে ৬০ শতাংশ অর্থ দেশের বাইরে চলে গেছে। সরকারের উচিত আন্তর্জাতিক ঋণ পুনর্বিবেচনা করা, কারণ বিদেশি ঋণের সুদের হার এবং গ্রেস পিরিয়ড নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য উল্লেখ করেন, সরকারের তথ্যভাণ্ডারে দেশটির পিছিয়ে পড়া জনগণের, বিশেষত নারী ও শিশুদের জন্য কোনো তথ্য নেই। এসব জনগণের উন্নয়নের জন্য আলাদা পরিকল্পনা তৈরি করা উচিত। তিনি আরও বলেন, সরকারকে একটি উন্নয়ন ফোরাম গঠন করা উচিত, যেখানে বৈদেশিক সাহায্য, রফতানির বাজার, এবং মানবসম্পদ রফতানি বিষয়ক সমস্যাগুলোর সমাধান আলোচনা হবে।

বুয়েটের অধ্যাপক ড. এম তামিম বলেন, বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্যাপাসিটি পেমেন্ট এবং অদ্ভুত প্রাক্কলন নিয়ে ভুল হিসাবের কারণে দেশের জ্বালানি খাতে অতিরিক্ত ৩ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে।

শ্বেতপত্র কমিটির সদস্য এম আবু ইউসুফ বলেন, দেশে বর্তমানে ১ কোটি টিন নম্বর রয়েছে, তবে সেগুলোর অধিকাংশই সক্রিয় নয়। তিনি বলেন, যদি এনবিআরের সাথে সঠিক ইন্টারঅপারেবিলিটি ব্যবস্থা করা যায়, তবে রাজস্বের আওতা অনেক বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও আরও উন্নত হবে।

ড. মুস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, প্রতিবেশী দেশ নেপাল ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বের হয়ে যাবে, তবে বাংলাদেশের এলডিসি গ্রাজুয়েশনের সম্ভাবনা এখনো রয়েছে। দেশের উন্নয়ন সূচকের উন্নতি এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।